Thursday, February 7, 2019

প্রিজারভেটিভ ছাড়াই খাদ্য সংরক্ষণ!


খাদ্য সংরক্ষণে ফরমালিন নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক আগে। তবে নানা রকম প্রিজারভেটিভের ব্যবহার চলছেই। কিন্তু প্রিজারভেটিভ সহনীয় মাত্রা ছাড়ালে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যের জন্য। এ বিষয়টি মাথায় রাখেন না দোকানিরা। নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেন। ফলে প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার খেয়ে বাড়ছে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা। অথচ অল্প খরচে প্রিজারভেটিভ ছাড়াই খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়! কীভাবে? সেই উপায় বের করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী।

এ উপায় তাঁরা তুলে ধরেছেন ‘বায়োপ্রিজারভেটিভ: এ ব্লেসিং অব ন্যাচার’ শিরোনামের একটি পোস্টারে। ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জমা দেওয়া ৬৭টি পোস্টারের মধ্যে সেরা হয় পোস্টারটি। গত ২৮ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেরা আইডিয়া প্রেজেন্টেশন’ শিরোনামে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েট (বিএবিজি) আয়োজিত প্রথম ন্যাশনাল কংগ্রেস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতার। এতে চ্যাম্পিয়ন হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল এবং জৈব প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী এন কে এম মিরাজুল হাসান, মো. মিফতাহ মুশফিক ও মো. মুজাহিদ আহমেদের তৈরি পোস্টারটি। রানারআপ হয় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করা পোস্টার।

গত মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় এই তিন তরুণের সঙ্গে। তাঁরা শোনালেন পোস্টার দেওয়ার ভাবনা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। তাঁদের মধ্যে এন কে এম মিরাজুল হাসান স্নাতকোত্তরে এবং মো. মিফতাহ মুশফিক ও মো. মুজাহিদ আহমেদ পড়ছেন স্নাতক তৃতীয় বর্ষে। 
নিজেদের ভাবনা কীভাবে জিতল পুরস্কার? এমন প্রশ্নে সবিস্তারে বর্ণনা দেন মুজাহিদ। ২০১৬ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি এই ভাবনা মাথায় আসে মুজাহিদ ও তাঁর বন্ধুদের। তবে এ নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ এ বছর এপ্রিলের শুরুতে তাঁরা জানতে পারেন বিএবিজির এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে। এরপর পুরোদমে শুরু হয় ভাবনা (আইডিয়া) পোস্টারে প্রতিফলনের। এপ্রিলের ২০ তারিখে কাজ শুরু হয়ে চলে প্রায় পাঁচ দিন। পুরো এই প্রক্রিয়ায় তাঁদের সহযোগিতা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল এবং জৈব প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক এস এম মুর্শিদ উল আলম।

এবার আসি মূল কথায়। প্রিজারভেটিভ ছাড়াই কীভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা যাবে? মিফতাহ বললেন, ‘খাদ্য নষ্ট হয় ব্যাকটেরিয়ার জন্য। আর এই ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করতে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ কিংবা ফরমালিন। কিন্তু আমরা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে খাদ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে মনে করছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের মূল উপাদান ব্যাকটেরিয়া থেকেই উৎপন্ন ব্যাকটেরিওসিন। এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের ঘায়েল করে। এই ব্যাকটেরিওসিন দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে খাদ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। ব্যাকটেরিওসিন একধরনের প্রোটিন, যা মানবদেহে কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। আর আমরা ব্যাকটেরিয়া থেকে ব্যাকটেরিওসিন উৎপন্ন করতে পারব একদম কম খরচে, যা দই থেকেও উৎপন্ন করা সম্ভব। এভাবেই কম খরচে সংরক্ষণ হবে খাদ্য আর সুস্থ থাকবে মানবদেহ।’

তাঁরা জানান, ভবিষ্যতে এই ভাবনা নিয়ে ল্যাবে কাজ করবেন। বাণিজ্যিকভাবে এই বায়োপ্রিজারভেটিভ উৎপন্ন করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে তাঁদের। 
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল এবং জৈব প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক এস এম মুর্শিদ উল আলম বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই কার্যকরী এবং বাস্তবসম্মত একটি উপায়। এখন ল্যাবে কাজ করে এ পদ্ধতিকে আরও এগিয়ে নেওয়া দরকার।
এ তো গেল পোস্টারের ভাবনার কথা। ভবিষ্যতে পেশাজীবনেও গবেষণা নিয়েই থাকতে চান এই তিন তরুণ তুর্কি। মিরাজ চান দেশের বাইরে গিয়ে অ্যানিমেল বায়োটেকনোলজির ওপর গবেষণা করতে। মিফতাহও বিদেশে গিয়ে নানা জটিল রোগ নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী। আর মুজাহিদের লক্ষ্য দেশের কৃষি নিয়ে কাজ করার।

তথ্যসূত্র: দৈনিক 'প্রথম আলো'; শিহাব জিশান | ২১ মে ২০১৭, ০২:৪৫

ভালো থাকুন | School of Awareness

No comments:

Post a Comment